যুবলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

চট্টগ্রাম ◑ চট্টগ্রামের রাউজানে এক মাছ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আজ রবিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের অংকুরিঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাছ ব্যবসায়ীর নাম বিতান বড়ুয়া (৪৭)। তিনি ওই ওয়ার্ডের পশ্চিম গহিরা অংকুরি ঘোনা এলাকার অতুল মেম্বারের বাড়ি মৃত সাধন বড়ুয়ার ছেলে ও ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি।

নিহতের স্ত্রী জয়াশ্রী বড়ুয়ার দাবি, স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে সেটিকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে প্রত্যাখান করেছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর আলী।

নিহতের স্ত্রী জয়াশ্রী বড়ুয়া বলেন. ‘আমার স্বামী বিতান বড়ুয়া প্রতিবছর পাশ্ববর্তী হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করেন। আজ বৈরী আবহাওয়ার কারণে ডিম সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কয়েকজন লোক দিয়ে নদীতে নৌকা নামান তিনি। কিন্ত ডিম সংগ্রহে নিয়োজিত লোকদের খাবার দেয়ার জন্য হাতে টাকা না থাকায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশির কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বিতান বড়ুয়া। ফেরার পথে বাড়ির সামনে একটি ভবনে ওঁৎ পেতে থাকা একই এলাকার প্রয়াত অনাদি বড়ুয়ার ছেলে রাহুল বড়ুয়া ও ছেনরাম বড়ুয়ার ছেলে উদয়ন বড়ুয়া প্রকাশ তুফান বড়ুয়াসহ ৫-৬ দুর্বৃত্তের দল তাকে গুলি করে। এরপর দুর্বৃত্তরা এবং ভবনে ওঁৎ পেতে থাকা কাউন্সিলর আলমগীর আলী আলাদা আলাদা মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায়। আমি এবং আমার শ্বাশুরি গুলির শব্দ শুনে দৌঁড়ে এসে দেখি, আমার স্বামী বিতান বড়ুয়া লুটিয়ে পড়েছে ঘটনাস্থলে। এরপর তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

নিহতের স্ত্রী ও প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার সময় দুটি গুলির শব্দ শোনা গেলেও বিতান বড়ুয়ার গলার নিচে একটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।’ তিন-চারদিন আগেও কাউন্সিলর আলমগীর আলী বিতান বড়ুয়াকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। তারা তাকে তার স্ত্রীর সামনে মারতে চেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী জয়াশ্রী বড়ুয়া।

নিহত বিতান বড়ুয়ার বন্ধু সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বেশ কয়েকমাস আগে এলাকায় মহাস্থবির দানোৎসবকে ঘিরে অতিথি দাওয়াতসহ নানা কারণেও বিতান বড়ুয়ার সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় স্থানীয় কাউন্সিলরের।

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর আলী বলেন, ‘বিতান বড়ুয়ার স্ত্রীর অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এখানে আমাকে পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার (বিতান বড়ুয়ার) সাথে আমার সঙ্গে কোন বিরোধ নেই, তর্কাতর্কিও হয়নি। আমার সঙ্গে তার ব্যবসায়িক-রাজনৈতিক কোন দ্বন্দ্ব নেই। আজকে কেউ অংকুরিঘোনা আমাকে দেখেছে বলেও কেউ বলতে পারবেনা। আজকে আমি সারাদিন বাড়িতে ছিলাম।’

প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে কাউন্সিলর আলমগীর আলী বলেন ‘একই এলাকার প্রয়াত অনাদি বড়ুয়ার ছেলে রাহুল বড়ুয়া ও ছেনরাম বড়ুয়ার ছেলে উদয়ন বড়ুয়া প্রকাশ তুফান বড়ুয়ার সঙ্গে পুকুর নিয়ে বিতান বড়ুয়ার বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি।’ এলাকার একটি হ্যাচারি ব্যবহার নিয়ে আমার সঙ্গে যে বিরোধ বলা হচ্ছে, তাও সঠিক নয়। বরং এলাকার মৎস্যজীবীদের হ্যাচারিটি ব্যবহারের জন্য আমি বারবার অনুরোধ করেছি।’

রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার আমজাদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘লাশ এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আসলে মামলা নেয়া হবে। তবে এই হত্যাকাণ্ডে এলাকার একজনের নাম পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।